সবাইকে সুস্বাগতম, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন, আজকে আমি জানি আমার মত আপনারাও খুব এক্সাইটেড হয়ে রয়েছেন, এই কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠানকে ধুম ধাম ভাবে পালন করার জন্য, আর এই শুভ মুহুর্তে আপনাদের সামনে আমি এসেছি এই একবিংশ শতাব্দীতে সত্যিকারের মার্গদর্শী শ্রী কৃষ্ণের জীবন চরিত্র নিয়ে আলােচনা করতে।
এই দৈবী, অলৌকিক, অসাধারন, ১৬ কলা জ্ঞান। সম্পূর্ন,সৰ্ব্বগুন সম্পন্ন শ্রীকৃষ্ণের মহিমা সার্বিক ভাবে আলােচনা করা, সাধারন জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষ্যে কখনাে সম্ভব নয়, তবে আমি পরমপিতা পরমাত্মার এই সঙ্গমে ব্রহ্মার মুখকমল দ্বারা যে শ্রেষ্ঠ ঈশ্বরীয় জ্ঞান প্রদান করে ছেন আর বিভিন্ন সন্ত মহাত্মা ও সর্বোপরি মহাভারত, ভাগবদ গ্রন্থে কৃষ্ণের জীবন ও চরিত্রকে নিয়ে যে সব তথ্য রয়েছে,এই দুইয়ের এক সুন্দর কম্বিনেশান করার চেষ্টা করেছি, যা বর্তমানে প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে টিকে থাকার জন্য এক মার্গ দর্শন হতে পারে, তা কিভাবে হতে পারে, তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাইছি,চলুন শুরু করা যাক!
আমি কোন সন্ত,মহাত্মা নই, না আমি কোন গুরু আমি যে কৃষ্ণ জ্ঞান শুনাতে যাচ্ছি, তা কৃষ্ণের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত উনার চরিত্র থেকে যে যে মেসেজ পেয়েছি, যা বর্তমান সমাজে বিভিন্ন টেনশান ডিপ্রেশানে স্বিকার হওয়া, সঠিক সময়ে সঠিক রাস্তাকে খােজে না পাওয়া, সমাজের চোখে অবেহেলিত হওয়া থেকে শুরু করে পরিবার, সংসার, প্রত্যেকটি জায়গাতে শ্রীকৃষ্ণকে লক্ষ্য করে , কিভাবে বেঁচে থাকার সহজ উপায় খােজে পাওয়া যায়, তার আলােচনাই করব, আমি কোন কৃষ্ণ লীলা বা কির্তন শুনাব না, কৃষ্ণর জীবন থেকে যে যে মেসেজ গুলি চোখে পরেছে তার মধ্যে
প্রথমত: কৃষ্ণের জন্ম:- আমরা সবাই জানি যে কৃষ্ণের জন্ম কোথায় হয়েছে? কৃষ্ণের জন্ম হয়েছে এক কারাগারে যা এক ভিখারীর সন্তানেরও হয়না, আর কেমন পরিস্থিতিতে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল? মা দৈবকী ও পিতা বাসুদেবের মনে কৃষ্ণের জন্মের পূর্ব থেকেই এক ভয় বিরাজ করছিল, ভাবছিল এইবার কি জানি হয়, হয়তাে এইবারও কংস এই সন্তানকে ও মেরে ফেলবে, আর সব থেকে উল্লেখ যােগ্য বিষয় কি ছিল জানেন? সন্তান যখন জন্ম হয়, তখন দেখা যায়, সন্তান চিৎকার করতে থাকে, মায়ের মনে খুশি থাকে, কিন্তু কৃষ্ণের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে দেবকীর চোখে জল, মনে অনেক ভয় , কিন্তু বর্তমান একবিংশ শতাব্দিতে এমন ও দেখা যায়,
যদি কোন ব্যক্তি গরিব ঘরে জন্ম নেয় তাহলে সে নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয় এমনকি মা বাবাকেও এই গরিব হওয়ার দায়ভার চাপিয়ে, অপমান ও করে , কিন্তু কৃষ্ণকি একবারও নিজের পিতা বাসুদেব বা মা দৈবকীকে বলেছে, যে আমার ভাগ্যই খারাপ, আমার জন্ম এক কারাগারে হয়েছে? না নিজেকে দোষি মনে করেছে? দ্বিতীয়ত মাতৃ বিয়ােগ: কৃষ্ণের যখন জন্ম হয়েছিল তখন যে করুন দৃশ্য চোখে পরে তা হল কৃষ্ণের জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই নিজের মায়ের কাছ থেকে আলাদা হওয়া, কংস কৃষ্ণকে মেরে ফেলবে তার ভয়ে, নন্দরাজের ঘরে কৃষ্ণকে দিয়ে আসে, মা দৈবকীর মনে এই বিয়ােগের যন্ত্রনা কতটা! তা সহ্যকর হবে? আর কৃষ্ণতাে ছােট হলেও তাে সবই বুঝতে পারত, তাহলে কৃষ্ণের মনে কেমন অনুভব হবে? কিভাবে কৃষ্ণ সহ্য করে নিল?
যে তার জন্মদায়ীনি মা তার কাছ থেকে চলে যেতে হচ্ছে প্রত্যেক সন্তানই জন্মের পর নিজের মায়ের কোলে খুব আনন্দে খেলা দোলা করে, কিন্তু কৃষ্ণের ভাগ্যে কি এটি সম্ভব হয়েছে? না! যাই হউক কৃষ্ণ ধীরে ধীরে বড় হল মা যােশােদার কাছে, যােশােদা মা হয়তাে জানেন না যে, কৃষ্ণ দৈবকীর সন্তান! কিন্তু কৃষ্ণ ত জানত, কৃষ্ণের আসল মা কে? তার পরও কি যােশােদাকে বুঝতে দিয়েছে? কৃষ্ণ তাে প্রতি মূহুর্তেই সেই বিষাদের যন্ত্রনা, বিষাদের কষ্ট ভােগ করে গেছে, কিন্তু তার পরও রাখাল বালকদের সাথে নিজের বন্ধুত্ব তৈরি করল হাসি খুশি খেলা দোলার মাধ্যমে লীলাতাে তাে কোন অংশে কম করেন নি,
তবে অদ্ভুত বিষয় হল তিনি যেই বালকদের সাথে খেলা করতেন তারা কেউ কৃষ্ণের সাথে মিল খেত না, পারিবারিক স্টেটাসই হউক, বা মানসিক লেভেলেই হউক, কোন অংশেই কৃষ্ণের সাথে মিলানাে যেত না, কিন্তু মজাদার বিষয় হল কৃষ্ণ কোন ব্যক্তিকেই এই বিষয়টি অনুভব করতে দেয়নি, প্রত্যেক রাখাল বালককে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছেন, অনেক ছেলে মেয়েদের দেখা যায় নিজের বন্ধুবান্ধব | তৈরি করার আগে স্টেটাস চেক করে , যে আমার সাথে ঐ ব্যক্তির স্টেটাস মিল আছে কিনা? সমাজে আমার বাবার যে সম্মান রয়েছে তার বাবার সেই সম্মান আছে কিনা? যদি না থাকে তাহলে বন্ধুর মর্জাদা তাে সম্ভব হবে না, আর যদি তার পরও আমার সাথে থাকতে চায় তাহলে। আমি যা যা বলব তাই তার করতে হবে, যদি আমার জন্য কোন অন্যায় করতে হয় তাহলেও করতে হবে, কারন তােমার স্টেটাস আমার থেকে নিচে! কিন্তু কৃষ্ণ কি করে ছেন? তার ব্যতিক্রম করে ছেন, আচ্ছা,
কৃষ্ণের পরিবারে তথা নন্দরাজের পরিবারে কি ধন সম্পদের অভাব ছিল বলে কোথাও পেয়েছেন? দুধ বা মাখনের কোন অভাব ছিল? নন্দরাজের পরিবারে কৃষ্ণের মত একটি ফুটফুটে সন্তান যদি মাখন খেতে চায় তাহলেকি তাদের অভাব পরবে? কিন্তু তার পরও কেন মাখন চুরি করতে গেছে? কৃষ্ণের নিজের জন্য না, তার বন্ধু মানে সখাদের জন্য! কারন বন্ধুদের পরিবার ততটা ধন সম্পদের অধিকারী ছিলনা, তাই তাদের জন্য মাখন চুরি করতেন, কিন্তু সব দোষ কার উপর পরত কৃষ্ণের উপর, সবাই মাখন চোর । বলতেন, আপনার মনে হয়না কৃষ্ণের মনে এই মাখন চোর শব্দটি কতটুকু খারাপ লাগবে? তার পরও সখাদের জন্য চুরি করতেন, আর সব দোষ নিজের ঘরে নিতেন, কিন্তু বর্তমানে নিজে দোষ করে অন্যদের উপর দোষ চাপিয়ে নিজে খালাস হতে চায়!
তার পর আসছি কৃষ্ণ যখন আর কিছু বড় হল তখন উনার সখী হিসাবে কাছে আসল রাধা, যদিও ভাগবতে কৃষ্ণের অনেক সখী দেখিয়ে ছিল, কিন্তু তার পরও একদম কাছের সখী ছিল রাধা, কাছের এই জন্যই বলছি, যখন মথুরা থেকে কৃষ্ণকে নিতে কংস তার মন্ত্রি অক্রোরকে পাঠিয়েছিল, আর কৃষ্ণও যখন মথুরাতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে রথে বসল, তখন রাধা শুনতে পেয়ে রথের সামনে এসে দাড়ায়, রথকে থামিয়ে দেয়, তখন সেই মন্ত্রি অক্রোর কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করে ন সে কে যে তােমার রথকে বাধা দিয়েছে? তখন কৃষ্ণ কি উত্তর দিয়েছে জানেন? তিনি বলেছেন মানুষ যখন দু:খ, যন্ত্রনা, আর কষ্ট পায় তখন সবাই এসে আমার সাথে শেয়ার করে , আর যখন আমি কোন বিষয়ে। যন্ত্রনা কষ্ট পাই তখন তার কাছে শেয়ার করি, আর সে হল রাধা, আর সব থেকে মজার বিষয় হল রাধা কি বলেছে জানেন? রাধা বলেছে হে কৃষ্ণ! আমি তােমাকে বাধা দিতে আসি নি আমি তােমাকে শেষবারের মত দেখতে এসেছি, আমি জানি এই বিশ্ববাসি তােমার সাহায্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, শুধু আমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য আমি স্বার্থপরের মত তােমাকে আটকাতে পরি না, কিন্তু বর্তমানে দেখুন, মানুষ ভালবাসার অভিনয় করে , একজন অন্যজনকে আপন করার অভিনয় করে, আমি অভিনয় এই জন্যই বলছি বিয়ের আগেতাে খুব আপন খুব কাছের অভিনয় করে, কিন্তু যখন বিয়ে হয় আর নিজের বাবার বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়িতে যায় তখন কি করে ? এক সিল মেরে দেয় যে, আজ থেকে আমার কথা ছাড়া এক পাও বেড় হতে পারবে না, এই হল আমাদের ভালবাসা! যেই ভালবাসার স্বাধীনতা থাকবে না, যেই ভালবাসা পায়ে শৃঙ্খল পড়িয়ে দেয়, তাহলে এটি কেমন ভালবাসা? ভালবাসা তাকেই বলে যে ভালবাসা সামনের ব্যক্তির খুশির জন্য নিজের ত্যাগ স্বিকার করতে পারে,
যাই হউক কৃষ্ণ যখন মথুরা গিয়ে কংসের সাথে যুদ্ধ করে কংসকে বধ করলেন, আর নিজের মা বাবাকে তথা মাতা দৈবকী আর পিতা বাসুদেবকে বন্ধীমুক্ত করলেন, তখন সেই মথুরার সিংহাসনে তাে বসার অধিকার স্বয়ং কৃষ্ণেরই তাইনা!কিন্তু কৃষ্ণকি সেই সিংহাসনে বসেছেন? না! বসিয়েছেন উনার পিতাকে, আজ যদি কোন সন্তান নিজে পরিশ্রম করে কোন অ্যাওয়ার্ড বা পুরুস্কার অর্জন করে তাহলে তার সম্পূর্ন ক্রেডিট নিজেই নিতে চায়, সে বলতে থাকে যে সে কত পরিশ্রম করে এই অ্যাওয়ার্ড এচিভ করতে পেরেছে, তার অহংকার আসতে থাকে।
এর মাঝখানে অনেক ঘটনা রয়েছে সেই গুলিতে আমি যাচ্ছিনা, এরই মাঝে কৃষ্ণের বিয়ে হয় রুকমনির সাথে, যাকে কেন্দ্র করে বিবাধ তৈরি হয় শিশুপালের সাথে জরাসন্দের সাথে, যার ফলে কৃষ্ণকে দ্বারিকাতে গিয়ে দ্বারিকা নগরী তৈরি করতে হয়েছে আর সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বয়ং বিশ্বকর্মাকে, বিশ্বকর্মা যখন কাজে হাত দেবেন, তখন কৃষ্ণকে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করে ন আমিতাে দ্বারিকা নগরী শুরু করতে যাচ্ছি, কিন্তু এই দ্বারকা নগরী তৈরির ক্ষেত্রে আপনার কোন ডিরেকশান আছে কিনা? যদি থাকে তাহলে বলতে পারেন, কৃষ্ণ তেমন ডিরেকশান দেন নি। শুধু এই টুকুই বলেছেন যদি সম্ভব হয় বৃন্দাবনের দিকে কোন জানালা বা দর্জা রাখবে না, বৃন্দাবনের দিকে কেন জানালা বা দর্জা না রাখার কথা বলেছেন? বৃন্দাবনে তাে কৃষ্ণ বড় হয়েছেন, সেখানে অনেক খেলাদোলা করে ছেন, অনেক বন্ধুবান্ধব উনার রয়েছে, যে মা কৃষ্ণকে লালন পালন কওে ছেন বড় করে ছেন সেই মা যােশদা রয়েছেন, কিন্তু তিনি সেই দিকেই দরজা জানালা রাখতে চাইছেন না? কারন তিনি অতীতে যা কিছু হয়েছে, তা আর মনে করতে চাইছেন না, আজ যা চলছে তার উপর ফোকাস করতে চাইছেন, আর ভবিষ্যতের জন্য রনকৌশল করতে চান, কিন্তু আজকাল মানুষ কি করে শুধু অতীতকে নিয়েই বাঁচতে চায়, অতীতে কি ভুল করে ছে, কি হাড়িয়েছে তার জীবন থেকে কি চলে গেছে, তার মধ্যে ডুবে থেকে বর্তমানের যে আনন্দ যে খুশির পরিস্থিতি তাকে ভােগ করতে পারছে না,
কৃষ্ণের জীবন কাহিনিটির দিকে যদি ফোকাস করি তাহলে দেখা যায় কৃষ্ণের লাইফে ছিল কষ্ট যন্ত্রনা আর বিষাদ, কিন্তু কখনােই অন্যদেরকে বুঝাতে দেয়নি যে তিনি কতটা কষ্টে রয়েছেন। কিন্তু তা সব কিছু ভুলে গিয়ে হাসি খুশিতে থাকতে ভালবাসতেন আনন্দে থাকতে ভালবাসতেন, আর আপনি দেখবেন কৃষ্ণের যত ছবি রয়েছে সেই ছবিতে বা মুর্তিতেও দেখা যায় কৃষ্ণ এক মুসকি হাসি দিয়ে রয়েছেন, আমি প্রথমেই বলেছি কৃষ্ণের চরিত্র এই একবিংশ শতাব্দিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের এক মার্গ পাওয়া যায়!
আর আমি উনার জীবন কাহিনি থেকে ক্ষুদ্র কিছু কিছু পার্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করে ছি, যদিও উনার আরও চরিত্র রয়েছে, মহাভারতে পান্ডব ও কুরুদের মধ্যে কৃষ্ণের অনেক ভুমিকা ছিল, ভাগবদগীতার রচনায় | এমন অনেক চরিত্র কৃষ্ণের রয়েছে যা আমাদেরকে জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য এক মার্গ বা রাস্তা বলতে পারে, কৃষ্ণের এই জীবন থেকে যে যে গুরুত্ব পূর্ন মেসেজ গুলি পেয়েছি তা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি,
No comments:
Post a Comment