১২ মাসের ১৩ পার্বন, এই কথাটি হিন্দু সনাতন ধর্মে প্রাই শুনে থাকি, ছােট থেকে বড় প্রত্যেকেই একটি অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতে অন্যটির জন্য আশায় থাকে কখন আসবে আর আনন্দ উপভােগ করবে, কিন্তু সেই পূজা বা অনুষ্ঠানে সব থেকে উল্লেখ যােগ্য বিষয় যেইটি চোখে পরে তা হল ভগবানকে সন্তুষ্ট করা, ভগবানকে সন্তুষ্ট করার অর্থ হল মানুষ যে দেব দেবীর পূজা করে তাদেরকে খুশি করা যাতে ভগবান খুশি হয়ে ভক্তদের খুব আর্শিবাদ করে এবং ভক্তরা ধন, সম্পদ, ঐশ্বৰ্য্য, বিদ্যা বুদ্ধিতে | যেন ভরপুর করে দেয়।কিন্তু ভগবানকে খুশি করবে কি ভাবে? মানুষ তার জন্য পূজারী বা ব্রাহ্মনের কাছে পূজার উপাচার বিষয়ে জানতে চায় বা বিভিন্ন পন্ডিতদের তৈরি বই থেকে ও জানার চেষ্টা করে, কিন্তু পূজার উপাচারই বলুন বা রিতিনীতি গুলিই বলুন এই রিতিনীতি গুলির মধ্যে যেমন আছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে তারপর পূজা অর্চনা করা, আর তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ যােগ্য বিষয় হল উপবাস থেকে ভগবানকে সন্তুষ্ট করা,
আমি দেখেছি ধর্মকে কেন্দ্র করে কোন কোন সময় মানুষ এমন চড়ম পর্যায়ে চলে যায়, আমরা ভুলে যায় যে আসলে সঠিক কি? আসুন আমরা জেনে নেই চড়ম পর্যায় বলতে কি বুঝায়! সর্ব প্রথম আমরা আলােচনা করব খাওয়া দাওয়া নিয়ে, অনেক মানুষকে দেখেছি যারা ধর্মের রিতি নিতি পালন করতে গিয়ে সারা দিন উপাস থাকে মানে সারা দিন না খেয়ে থাকে, কোন কোন সময় সাপ্তাহ কি সাপ্তাই উপাস থাকে, কিন্তু উপাস ভাঙ্গার পর যদি একবার খাওয়া শুরু করে তাহলে তাে আর বলার মতাে কোন শব্দই থাকে না, ধরেন আমাদের দুইটি পাউরুটি খেলেই চলে কিন্তু আমি এমন মানুষকেও দেখেছি সাত ,আট পাউরুটির পরও জিজ্ঞাসা করেন এর থেকে বড় আছে কি না! মিষ্টি পছন্দ এক দুই পিচ নিতে পারত, গােলাবজাম অন্য আইটেম ১২,১২ পিচ ও ভিতরে দিয়ে দেয় এর পরও জিজ্ঞাসা করে আর কিকি আইটেম আছে।
অনেক সময় আমাদের এখানে যখন কোন মহারাজ বা সন্ত, গুরু আসে তাদের জন্য স্পেশাল খাবার তৈরি হয়, তারা আলাদা খাবার যখন নেয় তখন আমাদের এমন মনে হয় যেন তারা স্পেশাল লােক, আসলে তারা ভাল কাজ করার লােক, মানুষকে জ্ঞান দান করার মত লােক, এই জন্যই তারা খাবারের উপর লক্ষ্য দেয়, প্রত্যেক সন্ত মহারাজ বা গুরু যারাই আছে তাদের শুদ্ধ। খাবার খাওয়া এই জন্যই প্রয়ােজন যাতে তারা সু সাস্থ্যবান থাকে, আর ভাল কাজকে এগিয়ে নিতে পারে, যত ফিট থাকবে তত বেশি দিন মানুষকে দিতে পারবে, এমন কিছু মানুষ যারা নিজে সন্ত বা মহাত্মা তৈরি হতে তাদের খাওয়া দাওয়ার সিস্টেমকে পরিবর্তন করতে চায়।
কিন্তু খাওয়া দাওয়ার পদ্ধতিকে পরিবর্তন করলেই সন্ত বা মহাত্মা হওয়া যায় না, একবার আপনি সন্ত মহাত্মার মত কাজ যদি করতে পারেন তাহলে খাবারের পরিবর্তন করতে পারেন, আপনি ভাল খাবার যদি খেতে পারেন তাহলে স্বাস্থ্যবান থাকতে পারবেন। যখন খাবারের কথা আলােচনা হচ্ছে আর সেই প্রসঙ্গে আমি এক ওয়ার্ড ব্যবহার করছি উপাস দেখা যায় অনেক। লােক উপাস সােমবারে করে বা কেউ মঙ্গলবারে করে বা আলাদা আলাদা বিশেষ কোন দিনে উপাস থাকে আমার একটি প্রশ্ন | উপাসের মানে কি? এতদিন পর্যন্ত হয়তাে কেউ এর অর্থই দিতে পারে নি।
বন্ধুগন উপাস এক সংস্কৃত শব্দ, উপ এর অর্থ হল খুব কাছে, যেমন উদাহরন রাষ্ট্রপতির একদম কাছের উপরাষ্ট্রপতি, অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির কাছে যিনি থাকেন তিনিই হলেন উপরাষ্ট্রপতি,তার মানে উপবাসকে যদি ভেঙ্গে ভেঙ্গে আলােচনা করি তাহলে দেখা যায় উপ মানে কাছের, বাস মানে থাকা, আমরা অনেক সময় বলি এখানে বাস করি মানে আমি এখানে থাকি এটিকে এই ভাবেও বুঝতে পারেন বনবাস মানে বনে থাকা,উপ কথার অর্থ হল কাছে, আর বাস কথার হল থাকা। উপবাস মানে কাছে
থাকা, এটিই হল উপবাস থাকার উদ্দেশ্য, আচ্ছা কার কাছে থাকার জন্য মানুষ উপবাস থাকে? ভগবানের কাছে থাকার জন্য | যখন হাজার হাজার বৎসর আগে মানুষের এক ধারনা ছিল ভগবান ৭ বা ১০ বা ১৫ দিনের জন্য এত সব কিছু করেন তাহলে একদিন তাে আমাদেরও উচিত ভগবানকে স্মরন করার।
তখন এমন একদিন উনাকে স্মরন করার জন্য পরিবারের সভাই একসাথে আসে, কিন্তু যদি ব্যক্তি তার কাজে দোকানে বা ক্ষেতে না যায়, তখন কি তারা ভগবানকে স্মরন করতে পারবে? তাদের কাছে কি এতটা সময় আছে? হয়তাে নেই। সিদ্ধান্ত হল আমরা ছুটি নেব, ফ্রি হব তাহলে ভগবানকে স্মরন করতে পারব, তার কাছে থাকতে পারব।আপনি বলেন তাে আমরা ভারতে কোন ধরনে ছুটি নিয়ে থাকি, যেমন রবিবার কিন্তু আপনি কি জানেন রবিবার তাে বৃটিশের দ্বারাই আমরা পেয়েছি, কারন। বৃটিশরা প্রত্যে রবিবারে চার্চে যেত।ইহাতাে তাদের জন্য সঠিক ছিল, কিন্তু ভারতে হয়তাে এক সময় ছুটি নিত পূর্নিমা তিথিতে বা আমাবস্যা তিথিতেও বলতে পারেন বা একাদশি সেই দিন আমরা ছুটি নিতাম আর ঘরে থাকতাম যাতে ভগবানের কাছে থাকতে পারি, যখন ভগবানের কাছে থাকতাম আর মানুষ যখন কাজ কর্ম ছেড়ে দিয়ে ঘরে থাকত আপনি দেখবেন যখন মানুষ কাজে থাকত তখন সঠিক সময়ে
খাবার খেত, মানে প্রত্যেকদিন রুটিন মাফিক খাবার খাবেন,আর যখন আর টুটালি ফ্রি হয়ে ঘরে থাকে আর ঐ সময়ে তাে কোন টিবিও ছিল না এন্টার টেন্টম্যান্টের জন্য মােবাইলের মত কোন মেশিন ও ছিল না, তাহলে আপনি আমাকে বলুন তারা। ঘরে বসে বসে কি করবে, তখন কিছুক্ষন পরে পরে তাদের খিদা লাগত, কিছুক্ষন পরে পরে হয়তাে তাদের স্ত্রিকে বলবে কিছু খাবরের ব্যবস্থা করে দাও না, তখন মহিলারা কি বলত তুমি আজ কাজ কর্ম ফেলে দিয়ে দোকান বন্ধ করে ছুটি নিয়ে ঘরে বসে আছ,
তাহলে আমরা কেন কাজ কর্ম বাদ দিয়ে বসে থাকতে পারব না, আমাদেরও তাে উপাস থাকতে হবে আমাদেরও তাে ভগবানের কাছে থাকতে হবে, যদি আজ আপনি দোকান বন্ধ করতে পার তাহলে আমাদের রান্না ঘরও বন্ধ থাকবে। আপনারা আমাকে বলুন ব্যক্তির পক্ষে কি সম্ভব সারা দিন না খেয়ে থাকা, হয়তাে না।যখন খিদা লাগত তখন ঘরের মহিলারা বলত ঠিক আছে দুধ খেয়ে নাও, ইহাতে আমাদের কোন পরিশ্রম করতে হবে না, আর যদি এই দুধে পেট না ভরে তাহলে এক কাজ করুন কলা খেয়ে নাও আজ উপবাসের ধারনাটিই পরিবর্তন করে দিয়েছে, আসলে উপবাসের আসল অর্থ হল কাছে থাকা, ভগবানের কাছে থাকা যাতে কাজ কর্ম ছেড়ে দিয়ে ফ্রি থাকতে পারেন, আর বেশি যাতে না খান এই জন্যই ধারনা তৈরি হয় যে ফল আহাড়। মানে ফল ভােজন করা,সারা দিন দুধ বা জুস খাওয়া, সাইন্টেফিকেলি ও ইহা বলতে পারেন আপনার স্টমাক কেউ আরাম দিবে বা ভাল ডাইজেস করবে,ইহা এই জন্যই মান্যতা ছিল কারন যদি আপনি বেশি খাবার যদি খান আর ভগবানের ধ্যন করেন তাহলে আপনি শুয়ে পরবেন, আর এই জন্যই যদি। আপনার স্টমাক হাল্কা থাকে তাহলে ভগবানের ধ্যান করাও অনেক সহজ হয়ে যাবে, এই ভাবে উপবাসের ধারনাটি তৈরি হয়েছিল। আর আপনি চিন্তা করে দেখুন আজ কি হচ্ছে উপবাসের নামে কম্পিডিশান হচ্ছে, এমনও বলতে শুনা যায় তুমি দুইদিন উপবাস করেছ আমি চারদিন উপবাস করব, তৃতিয় ব্যক্তি বলবে আমি ৭,৮ দিন উপবাস থাকব।
কেউ ২১দিন কেউ ১ মাস, বন্ধুগন সত্যি বলতে গেলে আমার এক বন্ধু যে আমাকে এসে বলে বন্ধু আমি এক দিন উপবাস থেকেই ২ কেজি কম করতে পেরেছি, আমি তাকে বললাম ও খুব ভাল ৩০দিন উপাস থাক সব শেষ হয়ে যাবে, সুজা উপরেই পৌছে যাবে কি হয় জানেন মানুষ সব কিছু একদম চড়ম পর্যায়ে নিয়ে যায়। এক দিন ঠিক আছে ৭দিন ১০ দিন ১৫ দিন | উপবাস, এক একদিন ঠিক আছে কিন্তু তাকে চড়ম পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। আরে এই চড়ম পর্যায়তাে ব্যক্তি তৈরি করেছে, কোন ধর্মেই এই ধরনের কথা নেই, আমি এক উদাহরন দিচ্ছি কেউ ফল খায় আবার কেউ বলে আমি ফল ও খাব না কেউ বলবে।
আমি আমও ধরব না, হয়তাে আরেক জন আসবে আর বলবে আমি জল ও স্পর্স করব না। আপনি কি জানেন, আপনার ব্রেইনে যে টিসু আছে এটি ৭০ থেকে ৮০% জলের দ্বারাই তৈরি হয়েছে, আর যখন আপনার শরীরে জল না পায় তাহলে কতটা ক্ষতি হবে! আপনি হয়তাে ইহা জানেনই না। আর বন্ধুগন আজকাল কম্পিটিশানের কারনে মানুষ এতটা এগিয়ে গেছে যা বলে বুঝানাে যাবে না। কে কত উপাস থাকবে তার উপরও কম্পিটিশান করতে থাকে আর ভগবানকে তাে পাওয়া দূরের কথা নিজেকেই দুর্বল করে ফেলে।সুতরাং এই বিষয়টি অবশ্যই লক্ষ্য দিতে হবে কোন জিনিসই চড়ম পর্যায় ভাল না মানে অতিরিক্ত কিছুই ভাল না, আমি ইহা বলছিনা বেশি খাবার খাও আমি ইহাও বলছি না যে ক্ষুদার্থ থাক, বেলেন্স নিয়ে আস। ভগবদ গীতাতে এক শব্দ দিয়েছে ভারসাম্য যুক্ত খাবার, ভারসাম্য যুক্ত আরাম।
যে খাবার না খায় সে খুব বেশি খায়, যে অনেক ঘুমায় আবার যে না ঘুমায় তারও কোন কাজ হবে না, প্রত্যেকটি তে। ভারসাম্য। যখন সবকিছুতে ভারসাম্য নিয়ে আসবে তখন দেখবেন সব কিছু আপনার জীবনে সহজ হয়ে যাবে, সুতরাং ভােগী হবে না, ত্যাগী হবেন না, সুতরাং জীবনে চলার ক্ষেত্রে ভারসাম্য নিয়ে আসুন।আজকে আপনাদের উপাসের এক আলাদা ধারনা দিচ্ছি আগের দিনে খাওয়া দাওয়াকে এই জন্যই দুরে রাখা হয়ে ছিল কারন যদি আপনি খাওয়া দাওয়া থেকে দুরে থাকেন আপনি দেখবেন আপনার ফ্রি টাইম পাবেন। কিন্তু আজ আমরা তার পরও কি টাইম দিতে পারি! না টিভিতে ব্যস্ত, মােবাইলে ব্যস্ত কেউ কম্পিউটারে ব্যস্ত।
টাইম ই নাই ফ্রি টাইম পেলেতাে সূজা মােবাইলের মধ্যেই ঢেকে যায়, কিন্তু আজ উপাসের নতুন ধারনা হল মাসে এক দিন বা দুই দিন সময় বেড় করলেন আর আপনি মােবাইল থেকে দুরে থাকবেন, টিবি থেকে দুরে থাকবেন বা নিউজ পেপার থেকে। দুরে থাকবেন বা আমি বলব ইন্টারনেট থেকে দুরে থাকবেন।
তখনই তাে আপনি নিজেকে নিজের সাথে থাকার সময় পাবেন, নিজের কথা শুনার সময় তাে পাবেন। আর এই জন্য আপনি মাসে একদিন বা দুই দিন সময় বের করুন যখন আপনি একটিও যন্ত্র আপনার কাছে থাকবে না, তা হবে টিবি, কম্পিউটার, বা ইন্টারনেট বা মােবাইল যদি সম্ভব একদিন বের করুন আর ইহার লাভ লেখেন কোন দিন ছিল যে আপনি এই কাজটি করেছেন, তার পর মাসে দুইদিন সময় বের করুন যেই দিন শুধু ফলই খাবেন এতে আপনার ডাইজেস্টের জন্য ভাল হবে আপনাকে | ফাইবারস দিবে,আপনার যতগুলি ভিটামিনের দরকার ঐগুলির পূর্ন হবে আপনি দেখবেন ইহা এক অদ্ভুত রেজাল্ট দিবে। আচ্ছা এই আলােচনার পর আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি এখনও কি আপনি উপাস করতে পারছেন! আপনি ভগবানের কাছে পৌছাতে কি পারছেন? বা সারা দিনে এমন কি সময় বের করতে পারছেন, এর সাথে ইহাও বুঝতে পারবেন জন্মাষ্টমী বা শীবরাত্রি এই সব দিন গুলিতে আমরা উপবাস করি ইহার একই অর্থ ঐই দিনে আমরা ভগবানের শক্তিতে সময় দিতে পারি, উনার কাছে থাকতে পারি।ইহাই হল উপাসের মেই অর্থ।
No comments:
Post a Comment